লাল সন্ত্রাস ১৯৯৬

স্মৃতি জিনিসটা বেশ উঁচুদরের বেঈমান।
সাল ১৯৯৬। তারিখটা ছিল মে মাসের ১০ তারিখ। বাম জমানায় ঘটে যাওয়া বহু খুনের ঘটনার মধ্যে একটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গিয়েছিলো ওই দিনটায় I যিনি খুন হয়েছিলেন তিনি সিপিআইএম পার্টির ভেতরকার লোক, এক্কেবারে অন্দরমহলের মানুষ। অথচ তার খুনের কোন তদন্তই ওই সময় হয়নি , এবং খুব স্বাভাবিকভাবে কেউ ধরা পড়েনি , এবং খুনের কিনারাও হয়নি I
" এই সময় " পত্রিকার দুটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় এই খুনের ঘটনা I
১৯৯৬ সালে সুশীলবাবু যখন খুন হন, তখন তাঁর বয়স ৭৫৷ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে দলের টাকাপয়সার হিসেব রাখতেন তিনি৷ অত্যন্ত সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত অজাতশত্রু সুশীলবাবু এক রাতে ইএম বাইপাসের উপর চিংড়িঘাটায় বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে নৃশংস ভাবে খুন হন৷ খালের ধারে তাঁর দেহ মেলে৷ কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে তাঁকে খুন করল, সে রহস্য এখনও ভেদ হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী তখন জ্যোতি বসু, পুলিশমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ অভিযোগ ওঠে, কিছু নেতা পার্টির টাকা নয়ছয় করায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অকুতোভয় সুশীলবাবু৷ তাই রাতারাতি ‘পথের কাঁটা’ উপড়ে ফেলা হয়৷
সুশীলবাবুর ভাইপো মৃণালকান্তি চৌধুরীর আক্ষেপ, ‘কাকাকে নৃশংস ভাবে খুন করা হল৷ অথচ তার পর কেউ দোষীদের ধরার জন্য আমাদের সাহায্য করেনি৷
বেলেঘাটার চিংড়িঘাটায় বাইপাসের ধারে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি আবাসনে থাকতেন আলিমুদ্দিনের কোষাধ্যক্ষ সুশীল চৌধুরী৷ ওই আবাসনের ৫ নম্বর ব্লকের তিনতলায় তাঁর সেই ঘর এখন অবশ্য তালাবন্ধ৷ রোজ দপ্তর থেকে ফিরে তিনি কয়েকশো মিটার দূরে ভাইপো মৃণাল চৌধুরীর বাড়িতে রাতে খেতে যেতেন৷ সুকান্তনগরের সেই বাড়িতে বসে রবিবার মৃণালবাবু বলছিলেন সে দিনের কথা৷ ১৯৯৬ সালের ১০ মে৷ ‘রোজকার মতো সেই রাতেও ছোটকাকা আমাদের বাড়ি এলেন৷ সুগার বেশি বলে সব কিছু খেতেন না৷ সে দিন কিন্ত্ত বললেন, সুগার কমেছে,’ বললেন সত্তর বছরের মৃণালবাবু৷ পাশ থেকে তাঁর স্ত্রী নমিতাদেবী জুড়ে দিলেন, ‘রাতে ভাত, পারশে মাছ খেলেন৷ অনুরোধ করায় একটু পিঠেও খেলেন৷ আমি টিফিনবক্সে মালপোয়া দিলাম৷ তার পর বাড়ি চলে যান৷’ পর দিন সকালে জানা যায় রাতে বাড়ি ফেরেননি সুশীলবাবু৷ তিন দিন পর চিংড়িঘাটার কাছে বাইপাসের ধারে মজা খালে গলার নলি কাটা অবস্থায় তাঁর দেহ পাওয়া যায়৷ দেহের পাশে একটি পেট্রোল লাইটার পাওয়া যায়৷ যার গায়ে ‘এস’ লেখা ছিল৷ সুশীলবাবু কিন্ত্ত ধূমপান করতেন না৷ সেই বিবরণ দিয়ে মৃণালবাবু বললেন, ‘সিপিএম কেন তদন্ত করেনি জানি না৷
মৃণালবাবুর প্রতিবেশী দে পরিবারের সঙ্গেও সুশীলবাবুর প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ ছিল৷ ওই বাড়ির ছেলে গোপালবাবুর কথায়, ‘দাদু সকালে যাওয়ার সময় মাঝে মধ্যে আমাদের সঙ্গে দেখা করতেন৷ খুব সাদামাটা মানুষ ছিলেন৷ তদন্ত করে দোষীদের কড়া শাস্তি দিতে হবে৷’ আপনারা এখন কোনও অভিযোগ দায়ের করবেন? বছর সত্তরের মৃণালবাবুর সতর্ক মন্তব্য, ‘ও সব পার্টির ব্যাপারে ভয় করে৷’ গোপালবাবুও ‘দলের’ বিষয়ে জড়াতে রাজি নন৷ "
কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে তাঁকে খুন করল, সে রহস্য এখনও ভেদ হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী তখন জ্যোতি বসু, পুলিশমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ অভিযোগ ওঠে, কিছু নেতা পার্টির টাকা নয়ছয় করায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অকুতোভয় সুশীলবাবু৷ তাই রাতারাতি 'পথের কাঁটা' উপড়ে ফেলা হয়৷
বুদ্ধদেববাবু বিধানসভায় দাঁড়িয়েই দু'-দু'বার ঘোষণা করেছিলেন, সুশীলবাবুর খুনিরা ধরা পড়বেই৷ কিন্ত্ত খুনিরা ধরা পড়েনি৷ ওই খুনের নেপথ্যে বিরোধীদের হাত আছে, এমন অভিযোগও সিপিএম তখন তোলেনি৷ দলের নেতা-কর্মী খুনের ঘটনায় অনেক সময়েই পার্টি কমিশন বসায়৷ সুশীলবাবুর ক্ষেত্রে তা-ও হয়নি৷ বস্ত্তত, অজ্ঞাত পরিচিত ব্যক্তি খুনের মতোই রাজ্য সিপিএমের এই কোষাধ্যক্ষের হত্যারহস্য ধামাচাপা দেওয়া হয়৷ সিপিএমের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অর্থ দপ্তরের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা৷ সেই সূত্রেই বিমানবাবু, নিরুপমবাবুর যৌথ অ্যাকাউন্টে ১৬ কোটি টাকার হদিশ মেলে৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, সর্বহারার পার্টির সর্বক্ষণের নেতাদের ব্যাঙ্কে এত টাকা জমল কী করে?
সুশীলবাবু খুনের সময় প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন রচপাল সিং৷ তিনি বলেন, 'সুশীলবাবুর খুনের তদন্ত করতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম৷ পর দিনই আমাকে রেলে বদলি করে দেওয়া হয়৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন পুলিশমন্ত্রী৷ উনি আমায় ডেকে ধমকেছিলেন৷'
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আমলে এক ফোঁটাও অগ্রগতি হয়নি তদন্তের। মাঝপথে এসে হারিয়ে গেছে তদন্তের পথ। হারিয়ে গেছে অনেক প্রশ্নের উত্তর। আজকেও উন্নততর মার্ক্সবাদী সাম্যের নামে ভোটভিক্ষা করেন ও গলা ফাটান প্রচুর আগুনখোর , কাঁচাখেগো বিপ্লবী। বিচারের বাণী হুল্লাট হুইস্কি খেয়ে ইএম বাইপাসের ধারে হেঁচকি তুলে বেড়ায়।
মার্ক্সবাদ সর্বশক্তিমান কারণ ইহাই সত্য।
Content and Images copied from Bengal Owl