Login Register
  • en
  • bn
  • সরস্বতী মহল লাইব্রেরি – থাঞ্জাভুরের ৫০০ বছরের জ্ঞানভাণ্ডার

    Aug 09 খবর

    তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুর শহরে অবস্থিত ঐতিহাসিক মারাঠা প্রাসাদ। ১৫৩৫ থেকে ১৬৭৪ সাল পর্যন্ত এটি ছিল নায়ক রাজবংশের শাসনকেন্দ্র। এই রাজারা শুধু দক্ষিণ ভারতে বিদেশি আক্রমণ প্রতিহত করেননি, বরং সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক সোনালি যুগের সূচনা করেছিলেন। তাঁদের শাসনামলেই প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের জন্য একটি বিশেষ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয় — যা আজ সরস্বতী মহল লাইব্রেরি নামে পরিচিত। এটি তামিলনাড়ুর প্রাচীনতম জীবিত গ্রন্থাগার এবং ভারতের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থাগার হিসেবে গণ্য হয়।

    স্থানীয়ভাবে মহারাজা সেরফোজির লাইব্রেরি নামে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ হয় এক মারাঠা রাজার নামে, যদিও এটি মূলত নায়ক রাজাদেরই প্রতিষ্ঠা। এর পেছনে রয়েছে এক ঐতিহাসিক ঘটনা — ১৬৭৫ সালে মারাঠারা নায়কদের কাছ থেকে থাঞ্জাভুর দখল করে। নায়ক শাসন শেষ হলেও সাহিত্য সংরক্ষণের ঐতিহ্য বজায় থাকে। আর এই লাইব্রেরিকে সর্বাধিক সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন মারাঠা শাসক সেরফোজি দ্বিতীয়।

    দূরদর্শী শাসক, দার্শনিক, মানবতাবাদী ও সংস্কৃতপণ্ডিত সেরফোজি দ্বিতীয় অল্প সময়ের মধ্যেই লাইব্রেরির সমস্ত পাণ্ডুলিপি পাঠ করেন। গ্রন্থসংগ্রহ বাড়াতে তিনি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে সংস্কৃত পণ্ডিতদের আমন্ত্রণ জানান, বিরল পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেন এবং বহু প্রাচীন গ্রন্থের অনুলিপি তৈরি করান। তাঁর সময়ে লাইব্রেরির সংগ্রহে যুক্ত হয় সংস্কৃতের পাশাপাশি তামিল, তেলেগু, মারাঠি ও ইংরেজি ভাষার অসংখ্য গ্রন্থ। তিনি ভারতের প্রথম দিককার সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য মানচিত্রও তৈরি করান। আশ্চর্যের বিষয়, এই লাইব্রেরিতেই সংরক্ষিত ছিল বিশ্বের প্রাচীনতম মুদ্রিত অ্যাটলাস এবং সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকের প্রাচীনতম তামিল বাইবেল। ২০০৫ সালে এই বাইবেলটি চুরি হলেও পরবর্তীতে লন্ডন মিউজিয়াম থেকে উদ্ধার হয়।

    নায়ক শাসনামলের আগে ভারতে নির্মিত বহু গ্রন্থাগার আজ হারিয়ে গেছে। কিন্তু এই অসাধারণ প্রতিষ্ঠানটি ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অটুট রয়েছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৪৯,০০০ পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে — যার মধ্যে ৩৯,০০০ সংস্কৃত, ৩,৫০০ তামিল এবং ৩,০০০ মারাঠি ভাষার। এর মধ্যে রয়েছে সন্ত রামদাস ও দত্তাত্রেয়ের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি, ১৮০৭ সালের মাদ্রাজ অ্যালমানাক, সেরফোজি দ্বিতীয়ের জারি করা নোট, তাঁর ব্যবহৃত গ্লোব, মানচিত্র, চিঠিপত্র এবং থাঞ্জাভুর শহরের প্রাচীন পরিকল্পনার দলিল।

    অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে ব্রিটিশ শাসনামলে এই লাইব্রেরি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও ১৯১৮ সালে জনসাধারণের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত হয়। স্বাধীনতার পর ভারত সরকার শুধু এই গ্রন্থাগারই নয়, সমগ্র মারাঠা প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

    আজ সরস্বতী মহল লাইব্রেরি শুধু তামিলনাড়ুরই নয়, গোটা ভারতেরই এক অনন্য সাংস্কৃতিক গর্ব ও জীবন্ত আর্কাইভ।